May 18, 2024, 4:08 am

‘সুমি আমার কাছে থাকলে এমন হতো না’ ‘রক্ত’ দিয়ে লেখা ৩ লাশের পাশে

‘সুমি আমার কাছে থাকলে এমন হতো না’ ‘রক্ত’ দিয়ে লেখা ৩ লাশের পাশে

Spread the love

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে একটি বাড়ি থেকে গতকাল শনিবার সকালে এক প্রবাসীর মা, স্ত্রীসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পাশেই গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে ছিল প্রবাসীর শিশুসন্তান। লাশের পাশে ছিল শ্যালো মেশিনের হ্যান্ডল, রেঞ্চ, রড ও ছুরি। উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘাটাইল থানার ওসি মো. আজহারুল ইসলাম সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। র‌্যাব জানিয়েছে, প্রেমঘটিত কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।

নিহতরা হলেন কাশতলার সৌদি আরবপ্রবাসী জয়েন উদ্দিনের মা জমেলা খাতুন (৬০), স্ত্রী সুমি বেগম (২৫) এবং কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে শাহজালাল (৩০)। এ ঘটনায় সুমির ছেলে আহত শাফিকে (৫) টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, শাহজালালের সঙ্গে সুমির প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

নিহত জমেলার আরেক পুত্রবধূ শাহনাজ বেগম জানান, গতকাল সকালে তিনি শাশুড়ি এবং দেবরের স্ত্রী সুমি বেগমকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। ভেতর থেকে তাঁদের সাড়াশব্দ না পাওয়ায় প্রতিবেশী এবং বাড়ির অন্যদের ডেকে আনেন। পরে সবাই মিলে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটের ওপর সুমি ও অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের লাশ এবং মেঝেতে শাহনাজ-সুমির শাশুড়ির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তাঁরা সুমির ছেলে শাফিকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, র‌্যাব-১২ টাঙ্গাইলের অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঘাটাইল থানার ওসি মো. আজহারুল ইসলাম সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে সকাল ১০টার দিকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ধারণা করা হচ্ছে, লাশের পাশে পাওয়া শ্যালো মেশিনের হ্যান্ডল, রেঞ্চ, রড ও ছুরি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়। ঘরের একপাশের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা ছিল, ‘এমনটা হতো না, যদি আমার সুমি আমার কাছে থাকত, এইসবের জন্য সুমির বাবা দায়ী।’ এদিকে শাহজালালের মা জমেলা খাতুন বলেন, ‘শুনলাম দেয়ালে নাকি কী লিখেছে। ও (শাহজালাল) তো লেখাপড়া জানে না; লিখবে কেমনে।’ জমেলা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান বলে জানান শাহজালালের প্রতিবেশী বন্ধু সোহেল।

দিগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন নিহতদের পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, সুমি বেগম কাশতলা গ্রামেরই সুতারপাড়ার জিন্নত আলীর পালিত মেয়ে। আট বছর আগে প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়। জয়েন বিদেশে থাকাকালে পাশের কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের শাহজালালের সঙ্গে সুমির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক বছর আগে তাঁরা দুজন পালিয়ে বিয়ে করেন। তাঁরা পাঁচ-ছয় মাস সংসারও করেন। জয়েন ছুটিতে বাড়ি এসে চার-পাঁচ মাস আগে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান করেন এবং সুমিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিন মাস আগে ছুটি শেষে জয়েন আবার সৌদি আরবে চলে যান।

নিহত জমেলা খাতুনের ভাই জামির আলী জানান, হজরত আলীর ছেলে জয়েন উদ্দিন সৌদি আরব এবং আরেক ছেলে জয়নাল আবেদীন কুয়েতপ্রবাসী। তাঁরা পাশাপাশি দুই বাড়িতে থাকেন। সুমির স্বামী জয়েন ছুটিতে দেশে এসে তিন মাস আগে ফিরে গেছেন।

র‌্যাব-১২ টাঙ্গাইলের অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত কি না তদন্তের পর তা জানা যাবে।

টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, আলামত ও ঘটনার পূর্বাপর দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসেবে রেঞ্চ, রড ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, ডিবি পুলিশ ও পিবিআইয়ের আলাদা টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে বা এতে তৃতীয় পক্ষ জড়িত কি না, তা তদন্তের পর জানা যাবে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় ঘাটাইল থানায় মামলা করা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category