May 4, 2024, 5:29 am

ইরান বনাম ইসরায়েল সামরিক শক্তিতে কোন দেশ এগিয়ে

ইরান বনাম ইসরায়েল: সামরিক শক্তিতে কোন দেশ এগিয়ে

Spread the love

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। মূলত চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শনিবার (১৩ এপ্রিল) গভীর রাতে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করেছে তেহরান।

ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেঁধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা। ফলে, দেশ দুটির সামরিক শক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিশ্লেষণ ও তুলনামূলক আলোচনা।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের সামরিক সক্ষমতার তথ্য তুলে ধরা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রকাশিত র‌্যাঙ্ক অনুযায়ী, ১৪৫টি দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। যেখানে ইসরায়েল রয়েছে তিন ধাপ পেছনে। পাওয়ার ইনডেক্সে ১৭তম অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল।

জনসংখ্যা:

ইরানের মোট জনসংখ্যা ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৭৩ জন, যাদের মধ্যে ৪ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ জন সেনা সদস্য হওয়ার উপযুক্ত।

ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৭ জন, যাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ জন সেনা সদস্য হিসেবে কাজ করার জন্য উপযুক্ত।

সক্রিয় সেনা সদস্য:

ইরানের সেনাবাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসে মোট ৬ লাখ ১০ হাজার নিয়মিত এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে।

রিজার্ভ সেনা:

ইসরায়েলের নিয়মিত সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাদের রিজার্ভ সেনার সংখ্যাও বেশি।

আর্থিক সক্ষমতা:

ইরানের সামরিক খাতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ৯৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে ৩৩তম। বিপরীতে এই খাতে ইসরায়েলের বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে ১৯তম।

তবে, বৈদেশিক ঋণ ও ক্রয়ক্ষমতার হিসাবে ইরানের চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ইসরায়েল।

বিমান বাহিনী:

ইরানের মোট সামরিক বিমান রয়েছে ৫৫১টি। অন্যদিকে ইসরায়েলের রয়েছে ৬১২টি। ২৪১টি অ্যাটাক যুদ্ধবিমান নিয়ে বিশ্বে দশম অবস্থানে আছে ইসরায়েল। আর ১৮৭টি অ্যাটাক যুদ্ধবিমান বিমান নিয়ে ইরানের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম।

সামরিক পরিবহনের জন্য ইসরায়েলের আছে ১২টি উড়োজাহাজ। অন্যদিকে ইরানের আছে ৮৬টি পরিবহন বিমান। ইসরায়েলের কাছে প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ১৫৫টি, বিপরীতে ইরানের আছে ১০২টি।

স্পেশাল মিশন এয়ারক্রাফটের দিক দিয়ে বিশ্বে ইসরায়েলের অবস্থান ১৫তম, অন্যদিকে ইরানের অবস্থান ২৫তম।

ইসরায়েলের হেলিকপ্টার ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪৬টি ও ৪৮টি। অন্যদিকে ইরানের আছে যথাক্রমে ১২৯ ও ১৩টি।

ট্যাংক ও সাজোয়া যান:

১ হাজার ৯৯৬টি ট্যাংক নিয়ে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ১২তম এবং ১ হাজার ৩৭৯টি ট্যাংক নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ১৮তম। অস্ত্রসজ্জিত যানের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইরান। ইরানের অস্ত্রসজ্জিত যান আছে ৬৫ হাজার ৭৬৫টি এবং ইসরায়েলের আছে ৪৩ হাজার ৪০৭টি।

তবে সেলফ-প্রোপেলড আর্টিলারির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের চেয়ে পিছিয়ে ইরান। এই হিসাবে ১১তম স্থানে থাকা ইসরায়েলের আর্টিলারি রয়েছে ৬৫০টি এবং ১৩তম স্থানে থাকা ইরানের আছে ৫৮০টি।

টোয়েড আর্টিলারির দিক থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ইরান। র‍্যাংকে ৭ নম্বরে থাকা ইরানের আছে ২ হাজার ৫০টি এবং ইসরায়েলের আছে ৩০০টি।

স্থানান্তরযোগ্য রকেট প্রজেক্টরের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইরান। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইরানের ৭৭৫টি প্রজেক্টরের বিপরীতে ৩১তম অবস্থানে থাকা ইসরায়েলের প্রজেক্টর ১৫০টি।

নৌ শক্তি:

১০১টি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বিশ্বে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে ইরান। অন্যদিকে ৬৭টি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান ৪৬তম।

ইসরায়েলের ৫টি সাবমেরিনের বিপরীতে ইরানের আছে ১৯টি। সাবমেরিনের হিসাবে ইসরায়েলের অবস্থান ১৯ ও ইরানের অবস্থান ৭।

৭টি ছোট যুদ্ধজাহাজ বা ফ্রিগেটস নিয়ে র‍্যাংকে দশম অবস্থানে থাকা ইরানের বিপরীতে ইসরায়েলের ফ্রিগেট সংখ্যা শূন্য। ইরান ও ইসরায়েল কারোর বহরেই যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ, হেলো ক্যারিয়ার ও ডেসট্রয়ার নেই।

ইসরায়েলের রয়েছে ১০টি করভেট অন্যদিকে ইরানের রয়েছে ৩টি। ইসরায়েলের রয়েছে ৪৫টি টহল জাহাজ। আর ইরানের টহল জাহাজ রয়েছে ২১টি। তবে, বিভিন্ন ধরনের মাইনের ক্ষেত্রে এগিয়ে ইরান। এ ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ২১তম এবং ইসরায়েলের অবস্থান ১৪৫তম৷

লজিস্টিকস:

এয়ারপোর্টের সংখ্যায় ইসরায়েলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ইরান। ইরানের ৩১৯টির এয়ারপোর্টের বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৪২টি এয়ারপোর্ট।

বন্দর ও টার্মিনালের সংখ্যায় প্রায় সমান দেশ দুটি। ইরানের আছে ৪টি বন্দর ও টার্মিনাল। অন্যদিকে ইসরায়েলের আছে ৫টি।

মার্চেন্ট মেরিনেও এগিয়ে ইরান। দেশটির মার্চেন্ট মেরিনের সংখ্যা ৯৪২টি (২০তম), অন্যদিকে ৮৭তম অবস্থানে থাকা ইসরায়েলের আছে ৪৫টি।

আয়তন ও ভৌগোলিক অবস্থান:

পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের আয়তন ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ কিলোমিটার এবং ইসরায়েলের আয়তন ২১ হাজার ৯৩৭ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বে ১০৮তম অবস্থানে থাকা ইরানের অন্য দেশের সঙ্গে সীমানার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯৪ কিলোমিটার। ইসরায়েলের আছে ১ হাজার ৬৮ কিলোমিটার।

ইরানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরাক, তুরস্ক, আরমেনিয়া, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে। অপরদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননের।

ইসরায়েলের উপকূলীয় সীমানা আছে মাত্র ২৭৩ কিলোমিটার এবং বিশ্বে এর অবস্থান ১৩তম। অন্যদিকে ইরানের উপকূলীয় সীমানা আছে ২ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার এবং বিশ্বে অবস্থান ৬৬তম।

প্রাকৃতিক সম্পদ:

ইসরায়েল প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে কোনো জ্বালানি তেল উত্তোলন করে না। যেখানে প্রতিদিন ইরান উত্তোলন করে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল। এ ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান নবম। প্রুভেন অয়েল রিজার্ভের ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। তাদের প্রুভেন রিজার্ভ ২১ হাজার কোটি ব্যারেল। আর ইসরায়েল ১ কোটি ২৭ লাখ ব্যারেল প্রুভেন রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বে ৭১তম অবস্থানে আছে।

ইসরায়েলের কোনো কয়লার খনি নেই। যেখানে ইরান কয়লা উত্তোলনের দিক থেকে বিশ্বে ৪৩তম। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয়, যেখানে ইসরায়েলের অবস্থান ৪০তম।

পারমাণবিক অস্ত্র:

ইরান এবং ইসরায়েল—কোনো দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের সংগঠন ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের অনুমান, ইসরায়েলের হাতে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে।

অন্যদিকে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই এবং তারা এটি তৈরিও করছে না। এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে কি না, সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

দুই দেশের সেনা, যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ সক্ষমতা হিসাব করে দেখা যায়, কেবল আকাশ প্রতিরক্ষা, ভৌগোলিক অবস্থান ও পারমাণবিক অস্ত্রের হিসাবে ইরানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। আর ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে জনসংখ্যা, স্থল শক্তি, নৌ শক্তি, লজিস্টিক, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে।

সামরিক দিক দিয়ে ইসরায়েল সবসময় আগ্রাসী কারণ, ইসরায়েল জানে তাকে যে কোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ কোন দেশের জন্যই কাম্য নই।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category