May 3, 2024, 9:34 pm

রাজপথে জবাব দেয়ার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

রাজনীতি: রাজপথে জবাব দেয়ার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

Spread the love

লেখক: মো. হাসিব উদ্দীন চঞ্চল, সম্পাদক বিডি সোশ্যাল নিউজ

মাঠের লড়ায়ের তেমন মেজর কোন সংঘাত না ঘটলেও দুই বড় দল আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলেরই শীর্ষ নেতারা কথার যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড়ছেন না৷ রাজপথ দখলের হুমকি পাল্টা হুমকিতে বেশ সচল রাজনীতির মাঠ।

আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, ‘‘বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না৷ তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে৷” আর বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘‘নির্যাতন আর হামলা প্রতিরোধ করে বিএনপি এগিয়ে যাবে৷ সরকার কথা এবং কাজে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে৷”

শুক্রবার মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রকাশিত গত ৯ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

বছরের প্রথম ৯ মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে আসক জানায়, স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কারণে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সবকটিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় সহিংসতার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে।

কুমিল্লা জেলায় গত ৯ মাসে ২৫টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জনের মৃত্যুসহ ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ২৩টি ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৩০২ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গত এক মাসের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে, মামলাও হচ্ছে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ বিএনপির অন্তত চার জন কর্মী নিহত হয়েছেন৷ বিএনপি নেতারা বলছেন, এই হামলা মামলায় ভয় না পেয়ে তাদের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছেন৷ তারা বলছেন, রাজপথ দখলের লড়াই শুরু হয়ে গেছে৷ সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার৷ আর আওয়ামী লীগ বলছে,  তারা মাঠে নামলে বিএনপিকে থাকবে না৷

বিএনপি নেতারা এরইমধ্যে তাদের নেতা-কর্মীদের লাঠি ও লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে বলেছেন৷ তারা বলছেন, বন্দুকের নল আওয়ামী লীগের দিকেও ঘুরে যেতে পারে৷ আর আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে রাজপথে জবাব দেয়ার কথা বলছেন৷ তারা বলছেন, রাজপথে নামলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, লীগ খেলতেই বিএনপির পা ভেঙে যাবে৷ ফলে রাজপথের উত্তাপ এখন কথায়ও৷ আর এই কথার উত্তাপই আবার মাঠ উত্তপ্ত করছে৷

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘সরকার তার কথা, হামলা আর মামলার মধ্য দিয়ে যা করছে তাতে একটি নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে৷ তাদের কথায় এবং কাজে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে৷ এটা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে৷ এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷ বিএনপি এতে ভয় পায় না৷ জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন আরো তীব্র করে এই সরকারকে বিদায় করব৷”

লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পল্লবীতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি দিয়ে তারা হামলা করছে৷ মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা হামলা করেছে৷ বিভিন্ন জেলায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি নিয়ে হামলা করছে, রক্তাক্ত করছে, হত্যা করছে৷ গতকালকে( মঙ্গলবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠি নিয়ে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে৷ তাই আমরা বাধ্য হয়েই আত্মরক্ষার্থে লাঠি সাথে রাখছি৷ এটা আওয়ামী লীগ এবং সরকার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে৷”

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা নিয়ে নামলে খবর আছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ভীত নয়। আওয়ামী প্রস্তুত ও সতর্ক আছে। রাজপথ থেকেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে- কাজেই আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন, ‘‘তারেক জিয়া কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়৷ তিনি লন্ডনের ক্যাসিনোতে বসে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির নির্দেশ দিচ্ছেন৷ এ কারণে ফখরুলরা বলছে লাঠি নিয়ে নামতে হবে৷ লাঠি আরো লম্বা করতে হবে, নিজস্ব অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ তো বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দেবে না৷ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে হলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, আমরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে অন্যায় করেছি, আর করব না৷ আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ বানিয়েছি, আর বানাব না৷ বাংলা ভাইদের প্রশ্রয় দিয়ে ভুল করেছি৷  বিএনপি যদি বলে আমরা শাহ এ এম এস কিবরিয়া , আহসান উল্লাহ মাস্টারকে নিরপত্তা দিতে পারিনি এজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, তাহলে বিএনপি রাস্তায় নামতে পারবে৷” তার কথা, ‘‘আমরা এখন আরো কঠিন অবস্থায় যাবো৷ বিএনপি যেভাবে হুমকি দিচেছ যে আমাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না, আমরা যদি চূড়ান্তভাবে রাস্তায় নামি  তাহলে বিএনপি ঘর থেকে বের হতে পারবে না৷”

একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সব দিক থেকে সরকার এবং সব দলের ওপর চাপ আছে৷ আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কারুরই ২০০৬ সাল বা ২০১৪ সালের মত পরিস্থিতি তৈরি করার মত অবস্থা আছে বলে মনে হয় না। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কথায় এখন মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে৷

বিএনপি রাস্তায় শোডাউন করে এখন তাদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে চাচ্ছে৷ সরকারের অবস্থাটাও বুঝতে চাচ্ছে৷ আর সরকার  মনে করছে বিএনপি যদি এভাবে মাঠে নেমে তাদের জনপ্রিয়তা দেখাতে পারে তাহলে সরকারকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category