লেখক: মো. হাসিব উদ্দীন চঞ্চল, সম্পাদক, বিডি সোশ্যাল নিউজ
বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের ভিসানীতি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি কোনো সুখবর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাট বাণিজ্য সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স ঘিরে সম্পর্ক রয়েছে। এমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিজেদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংকট নিরসন করা গেলে এমন নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যেত।
এই ভিসানীতি আমাদের দেশের জন্য অনেক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারন পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক এই জায়গাতেও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে আছি। দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের সহযোগিতা আসছে, এর বড় একটা অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় একক বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক সেখানে রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি আসে দেশটি থেকে।
আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নিয়েতো সমস্য আছেই। এখানে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যেভাবে দরকষাকষি করছি, সেখানে দুটি দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বড় সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি অনুদান আসে, এর সবচেয়ে বড় অংশ অবদান তাদের। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা হয়েছে, এর সবচেয়ে বলিষ্ঠ সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র।
করোনার সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন এসেছে। অন্যদিকে বহুপাক্ষিক দিক মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যে কাজ করছে, সেখানে তাদের সহযোগিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দুইভাবে সহায়তা করছে। প্রথমত প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় অপারেশনের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহে। এছাড়াও শান্তি রক্ষা মিশনে তারা সবচেয়ে বেশি অনুদান দেয়। মোট অনুদানের ২৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। এসব বিবেচনায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আমাদের জন্য হুমকি স্বরুপ।
আমাদের, ‘বর্তমান এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ২টি উপায় এই মূহুর্তে বলা যেতে পারে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণভাবে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনি সংকট নিরসন করা। যা আমরা বড় দুই রাজনৈতিক দলের আচার-আচরণ কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, কূটনীতিকদের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সাথে সংবেদনশীল আচরণ করা। রাজনীতিবিদরা যে আচরণই করুন না কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে যুক্ত সবাইকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে সংবেদনশীলতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এখানে যেকোনো রকম মাথা গরম করে আক্রমনাত্বক সিধান্ত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
আমাদের ভূলে গেলে চলবে না বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সমান সক্ষমতার দেশ নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কেমন নির্বাচন হয় তা ধরে বা তাদের ভূল ভ্রান্তি ধরে আমাদের কোনো লাভ নেই। বরং আমাদের জোর দেওয়া উচিত, আমরা বিষয়টাকে কীভাবে ম্যানেজ করব সে বিষয়ের প্রতি।
পরিশেষে বলবো ভিসানীতি দেওয়ার কারণেই যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হবে এই চিন্তা করাটাই সম্পর্ন ভুল ধারনা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যে ঘাটতি আছে সেটি বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের কোনো দেশ ভিসানীতি দিয়ে এটি ঠিক করে দিবে এইরকম ধারন করা বা ভাবা সঠিক নয়।
Leave a Reply