পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে চাষাবাদের জন্য সাধারণত ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও প্রতিকূল পরিস্থিতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও, রাঙামাটি এবং অন্যান্য পাহাড়ি জনপদে কৃষকরা নিজেদের পরিশ্রম আর উদ্ভাবনী চাষ পদ্ধতিতে কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছেন। উন্নত প্রযুক্তি এবং উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত গ্রহণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেছে।
এই উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ শুধু কৃষকদের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা আনছে না, বরং পুরো পাহাড়ি এলাকার কৃষি-অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করছে। উন্নত চাষাবাদের এই সাফল্য পাহাড়ি কৃষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, একইসঙ্গে দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করছে।
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার উত্তর বন গ্রামে, সদর উপজেলার শুকরছড়ি গ্রামে ও কাউখালী উপজেলার পূর্ব লুঙ্গিপাড়া গ্রামে গ্রামে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর তত্ত্বাবধানে কম সময়ে
শনিবার (২৩ নভেম্বর ) দিনের শুরুতে কাপ্তাই উপজেলার উত্তর বন গ্রামে স্থানীয় কৃষক মাসুদুর রহমানের জমিতে নমুনা শস্য কর্তন সম্পন্ন করা হয়। উপজেলার সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহালী কুমার চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনী জমি থেকে কর্তন শেষে ধান মাড়াই করে প্রদর্শনী জমি থেকে কর্তন শেষে ধান মাড়াই করে ব্রি ধান-৫২ হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৮ টন, ব্রি ধান ৮৭ হেক্টর প্রতি ৬দশমিক ২ টন, ব্রি ধান ৭২ হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৬ টন, ব্রি ধান ১০৩ হেক্টর প্রতি৭ দশমিক ২ টন, বিনা ধান-২০হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৯টন, বি আর ১১ হেক্টর প্রতি ৪দশমিক ৯টন ধান পাওয়া যায় ।
স্থানীয় কৃষক মাসুদুর রহমান নিজে উচ্চ ফলনশীল এইসব ধানের জাত চাষ করতে পেরে আনন্দিত। তিনি ব্রি ধান ১০৩, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৭২ ধানের জাত পছন্দ করেন এবং আগামী মৌসুমে অধিক জমিতে চাষাবাদ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একই দিনে দুপুরে সদর উপজেলার শুকরছড়ি গ্রামে নীল চন্দ্র চাকমার জমিতে নমুনা শস্য কর্তন সম্পন্ন করা হয়। সদর উপজেলার স্থানীয় কৃষক ইন্দ্র মুজিব চাকমা ব্রি ধান ১০৩, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৭২ ও ব্রি ধান ৫২ ধানের জাত পছন্দ করেন। চলতি মৌসুমে ভালো ফলন পাওয়ায়, আগামী আমন মৌসুমে এই সকল জাতের ধান চাষে উৎসাহিত হন।
রবিবার (২৪ নভেম্বর ) সকালে কাউখালী উপজেলার পূর্ব লুঙ্গিপাড়া গ্রামে থুইসাংমা মারমার জমিতে নমুনা শস্য কর্তন সম্পন্ন করা হয় । সদর উপজেলার স্থানীয় কৃষক আরেমং মারমা ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ১০৩, ব্রি ধান ৭২ ও ব্রি ধান ৫২ ধানের জাত পছন্দ করেন। চলতি মৌসুমে ভালো ফলন পাওয়ায়, আগামী আমন মৌসুমে এই সকল জাতের ধান চাষে উৎসাহিত হন। স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এসব ধান জাতের চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলে।
প্রদর্শনী জমি থেকে কর্তন শেষে ধান মাড়াই করে প্রদর্শনী জমি থেকে কর্তন শেষে ধান মাড়াই করে ব্রি ধান-৫২ হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৮ টন, ব্রি ধান ৮৭ হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৩ টন, ব্রি ধান ৭২ হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ১ টন, ব্রি ধান ১০৩ হেক্টর প্রতি ৬ দশমিক ১ টন, বিনা ধান-২০হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ১ টন, বি আর ১১ হেক্টর প্রতি ৫দশমিক ২টন ধান পাওয়া যায় ।
পাহাড়ি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও এগ্রিবিজনেস এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনালhttps://www.agribusinessedu.com এর সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে জলবায়ু উপযোগী আধুনিক উচ্চ ফলনশীল (উফসি) জাতের কম সময়ে অধিক ফলন, রোগবালাই মুক্ত ছয় (০৬) ধরনের ধান জাতের হেড টু হেড প্রদর্শনী করা হয়। এসব ধানের জীবনকাল ১২৫ থেকে ১৪০ দিন।
আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর বাস্তবায়নাধীন নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপজেলার সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, এগ্রিবিজনেস এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রজেক্ট অফিসার থুইনু মারমা, প্রদর্শনী জমির কৃষকগণ সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এলাকার বিপুল সংখ্যক কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন ।
নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে পাহাড়ি অঞ্চলে আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) এর কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল ধান জাতের প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষককে আধুনিক জাতের ধান চাষে আগ্রহী করার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।