মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট কী বার্তা দিচ্ছে?

Reporter Name / ১৪ Time View
Update : সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) একটি টুইট করেছেন।
গতকাল ৩১শে অক্টোবর বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী রাত ১১টায় পোস্ট করা সেই টুইটটিতে তিনি সবাইকে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি’র শুভেচ্ছাও জানান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক মাস ধরেই এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে, গত পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র ভারতের সম্পর্কে ভাটা দেখা দিয়েছে।
এখন, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকার পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট বাংলাদেশকে আসলে কী বার্তা দিচ্ছে?
এটি কি স্রেফ নির্বাচনি প্রচারণা নাকি ইউনূস সরকারকে চাপে ফেলতে ভারত বা মোদী সরকারের কোনও কৌশল? এমন নানা সমীকরণ মেলানো হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই টুইটটি ঘিরে।
ট্রাম্প কেন এসব কথা বললেন?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইট শুরুই করেছেন এভাবে– বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন।
এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ “বিশৃঙ্খল” অবস্থার মাঝে রয়েছে।
যদিও তার এই শুরুর বক্তব্যের সাথে একমত নন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য দেশের অনেক বিশ্লেষক। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশে যে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে সেটিও অস্বীকার করছেন না তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টম কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তবে এগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।”
মি. ট্রাম্প বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কতটা অবগত, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “ভারতের কিছু ডানপন্থী মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছে। তাই এটি রাজনৈতিক চাল হতে পারে। অথবা, তিনি ভুল তথ্য পেয়েছেন ও তা বিশ্বাস করেছেন।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবিরও মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “ফিড করা হয়েছে”। অর্থাৎ, তাকে এটি বোঝানো হয়েছে। “নয়তো, তার এই ধরনের কথা বলার কথা না। কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন, এইগুলো খুবই শক্ত শব্দ।”
দিল্লির কাছে ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন বহু বছর ধরে। তিনিও এই কথা স্বীকার করেন যে ভারতীয় গণমাধ্যমে এই ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা যে ঘটেছিল সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সঙ্গেও এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিবিসি বাংলা’র। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় গণমাধ্যম “ছোট ঘটনাকে বড় করে” বলে আসছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়, ট্রাম্পের টুইট তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।”
“হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রধানত ভারতীয়দের ভোট নিশ্চিত করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য,” বলেন তিনি।
মি. রীয়াজ বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানও।
কেবল আলী রীয়াজ-ই নন, অন্যান্য বিশ্লেষকরাও একমত যে ট্রাম্পের এই টুইটের মূল লক্ষ্য আসন্ন মার্কিন নির্বাচন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Diana Host Ltd