রিজভী আহমেদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, অবরোধ বলতে তারা সারা বাংলাদেশে সব ধরণের চলাচল বন্ধ করাকেই বুঝিয়েছেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “অবরোধ কর্মসূচি মানে সর্বাত্মক অবরোধ। রাস্তা-ঘাট, রেল, নৌ সব বন্ধ থাকবে। এমনকি শহরের ভেতরেও সব ধরণের চলাচল বন্ধ থাকবে।”
হরতাল ও অবরোধ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
‘হরতাল’ শব্দটি গুজরাটি। ‘হর’ মানে সবজায়গায় আর ‘তাল’ মানে তালা। অর্থাৎ, হরতাল মানে হলো সবজায়গায় তালা।
ইতিহাস মতে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এই হরতালের প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‘তমুদ্দিন মজলিস’ প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে হরতাল বেশ প্রচলিত একটি কর্মসূচি।
পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে অনেক হরতাল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এরশাদের দীর্ঘ শাসনামলে হরতালের পাশাপাশি কিছু অবরোধ হয়েছে। আওয়ামী লীগও বিরোধীদলে থাকার সময়ে দেশে বহু হরতাল কর্মসূচি এবং অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
কোনো রাজনৈতিক দল কোনো ইস্যুতে হরতালের ডাক দিলে সেই কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া দেওয়ার একটি সম্পর্ক থাকে। অর্থাৎ মানুষ হরতালের ইস্যুর সাথে একমত হয়ে তাতে সাড়া দিয়ে পরিবহন, দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ রাখবে।
হরতালের মতো অবরোধেরও রয়েছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। কোনো দূর্গ ও এলাকা দখলের আগে অবরোধের ইতিহাস বিভিন্ন আমলেই দেখা গেছে। গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা উঠে এসেছে। ট্রয় নগরীতে রাণী হেলেনকে অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় দশ বছর ধরে গ্রিকদের ট্রয় অবরোধ করার ঘটনা বহুল আলোচিত। পরে এই অবরোধের জেরে নানা ঘটনাবহুল যুদ্ধে ধ্বংস হয় সেই ট্রয় নগরী।
জেরুজালেম অবরোধের ঘটনা ঘটে ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। মিসরের আইউবীয় সুলতান সালাদিন ওরফে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে এই অবরোধ হয়। ওইসময় শহরের নাগরিকদের শহর থেকে বের হতে দিতে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক দল অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া মানে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যে, কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। তাতে জনগণ হরতালের মতো সাড়া দিক বা না দিক অবরোধ হবে। কর্মসূচি পালনে মানুষকে অনেকটা বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হরতাল আর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে অনেকসময় পার্থক্য করা মুশকিল হয়।
আপনার মতামত লিখুন :