লেখক: মো. হাসিব উদ্দীন চঞ্চল, সম্পাদক বিডি সোশ্যাল নিউজ
প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামের সাথে পাল্লা দিতে দিতে হাপিয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ৷ বাজারে, গণপরিবহনে প্রতিনিয়ত বাগবিতন্ডে জড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। করোনাকালে ক্ষতির মুখে পড়া মানুষের অনেকেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে মরার উপর খড়ার ঘা নিত্যপণ্যের দামের বর্তমান পরিস্থিতিটি অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এখন মোটামুটি সব পণ্যের দামই বাড়তি। আর এই সব সংকটের প্রধান শিকারই জনগণ।
বাংলাদেশে করোনার কারণে তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন৷ আর গত জুন মাসে পিপিআরসি এবং ব্র্যাকের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নতুন করে আরো ২১ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছেন৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে দারিদ্র্য আরো বাড়বে৷ তাদের কথা, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে তৃতীয় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ঢেউ চলছে৷ গত কয়েকদিনে সব পণ্যের দাম গড়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেড়েছে৷
এখন প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ছে৷ ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন তিন দিনের ব্যবধানে এখন ১৫০-১৫৫ টাকা৷ তিন দিন আগে ছিল ১২৫ টাকা৷ প্রতিটি ডিমের দাম এখন ১৩ টাকারও বেশি৷
সবচেয়ে কম দামের স্বর্ণা মোটা চালের দামও ৫৩-৫৫ টাকা৷ এর চেয়ে কমদামে বাজারে আর কোনো চাল নেই৷ সয়াবিন তেলের দাম সরকারের বেঁধে দেয়া ১৮৫ টাকা দামে আর সয়াবিন তেল পাওয়া যায় না৷ চাল, ডাল, চিনি, দুধ সব পণ্যের দামই গত দুই-তিন দিনে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
এদিকে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা৷ তাই বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে৷ তারা দাম শতকরা ২০ ভাগ বাড়ানোর দাবি করেছেন৷
গত ছয় মাসে তেল বিক্রিতে বিপিসি’র মোট ৮ হাজার ১৪.৫১ কোটি টাকা পরিচালন লোকসানকে যুক্তি হিসেবে দেখিয়ে গত ৫ই আগস্ট জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তেলের মূল্য ৪২.৫ শতাংশ থেকে ৫১.৬ শতাংশ বাড়িয়েছে যা ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে সরকার একই যুক্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতিলিটারে ১৫ টাকা বাড়ায়। বিপিসি’র তথ্যানুসারে, ২০১৮ অর্থবছর থেকে সংস্থাটি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তথ্য অনুসারে, নিয়মিত পরিচালন খরচ এবং অন্যান্য কর দেয়ার পরও বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে বিপিসি’র রয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, এর তিনটি বিতরণকারী কোম্পানি- পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংক আমানত রয়েছে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের তথ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর সূত্র জানিয়েছে, ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ রাজস্ব কর্তৃপক্ষটি প্রায় ৩৪ শতাংশ কর আদায় করে।
সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমছে অথচ আমাদের দেশে বৃদ্ধি করা হলো। অথচ নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোথাও তেলের দাম বাড়তি নেই। ভিয়েতনাম উদীয়মান অর্থনীতির একটা দেশ অথচ ভিয়েতনামে ডিজেলের লিটার প্রতি দাম ৯৭.৯ টাকা।
সরকার স্বীকার করুক আর নাই করুক, নানা কারণেই তারা যে এখন চাপের মধ্যে রয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে কালো টাকার ছড়াছড়ি, দুর্নীতি সীমাহীন, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন, জ্বালানি তেলের ভয়াবহ উচ্চমূল্য, ডলারের আকাশচুম্বী দাম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য, মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশের অগণিত সাধারণ মানুষের এখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ মূল্যবৃদ্ধি হওয়া জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :