আমার বাবার দাদা মরহুম খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরী এই বাড়ীটি নির্মাণ করেন তার দাদা বক্স আলী চৌধুরীর নামে। খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরী খুব মেজাজি ছিলেন। তৎকালীন সময়ে তাকে বৃটিশরা “খান বাহাদুর” উপাধিটি দিয়েছিল।
ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ীটি নির্মাণ করতে কাজ করেছিলেন বাঁশখালীর ওয়াহেদ আলী নামে একজন মিস্ত্রীর তত্ত্বাবধানে কয়েকশ মানুষ। প্রবীণ মুরুব্বীদের কাছ থেকে শুনেছি বাড়িটি ১৯১০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। বিশেষ কায়দায় বানানো ইট, ইটের গুড়ি আর চুন দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল বাড়ীটি। বাড়ীর পিছনের দিকে তখন গাছ ও বাঁশ দিয়ে তৈরী একটি ঘর ও রান্নাঘর ছিল। যেখানে বাড়ীর খেদমতকারীগণ থাকতো ও রান্নাবান্নার কাজ করতো। বাড়ীর পিছনের ঘরটির পিছনের পুকুরটি খনন করেছিলেন খান বাহাদুর আবদুল জব্বার চৌধুরী। পুকুরে ছোটবড় অনেক মাছ পাওয়া যেতো।
বাড়ীর পশ্চিম পাশে একটি ধানের গোলা ছিল। যেখানে প্রায় দুই হাজার আড়ি (গ্রামীণ পরিমাপের শব্দ, সের/কেজি) ধান রাখা যেতো। বাড়ীতে এখনো সেই পালকী আছে যে পালকীতে করে আমার বাবার দাদীকে ফাতেমা খাতুন চৌধুরানীকে বিয়ের সময় আনা হয়েছিল। সেই পালকীর জন্য ৪ জন পালকীবাহক নিয়জিত ছিল। আর বাড়ীর সামনের সেই উঠানটি এখনো স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাদের বাড়ীর সামনের পুকুরঘাট ১৯২০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে খান বাহাদুর আব্দুল জব্বার চৌধুরী এলাকার মানুষজনের সাথে কথাবার্তা বলতেন। এলাকার বিচার-আচারও করতেন পুকুরঘাটে বসে। এই পুকুরঘাটকে ঘিরে আরো অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যা আরেকদিন বলা যাবে।
বাড়ীর মসজিদটি ১৮৩০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। প্রথমে বাঁশের মসজিদ ছিল। পরবর্তীতে গাছ ও টিন দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৬৫ সালের দিকে ইট দিয়ে মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা (Leader of the opposition), প্রাদেশিক আইন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাবেক সংসদ সদস্য এ.কে.এম. ফজলুল কবির চৌধুরী।
– ফারাজ করিম চৌধুরী
ফেসবুক থেকে নেওয়া
আপনার মতামত লিখুন :