বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি অতীত বর্তমান


Md. Hasib Uddin প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৪, ২০২৪, ৬:৩২ অপরাহ্ন /
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি অতীত বর্তমান
Spread the love

লেখক: মো হাসিব উদ্দীন চঞ্চল, সম্পাদক, বিডি সোশ্যাল নিউজ

ছাত্ররাজনীতি মানে নিজেদের কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারা এবং কর্তব্য পালনে দায়িত্বশীল থাকা, সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সরব ও সচেষ্ট থাকা, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সচেতন থাকা ও মত প্রকাশ করা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মুক্তচিন্তা ও বাক্স্বাধীনতার জন্য কাজ করাটায় ছাত্ররাজনীতি কিন্তু আমরা আসলে যা দেখি তা হলো ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করা, বড় নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগে বল প্রয়োগ করা কিংবা এই সূত্রে গোপনে অর্থের লেনদেন করা, সাধারণ ছাত্রদের ওপর নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড চালানো এবং আবাসিক হলগুলোয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, বয়স পার হয়ে গেলেও যেকোনো উপায়ে হলে থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খবরদারি করা এগুলো হচ্ছে ছাত্ররাজনীতির বর্তমান চেহারা। কিন্তু সাধারন মানুষ এই চেহরা দেখতে চাই না তাই ছাত্ররাজনীতি অনেকে নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

Md. Hasib Uddin Chanchal, Journalist

আবারো ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা/অপ্রয়োজনীয়তার প্রশ্নটি চলে এসেছে

১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাপটের সাথে এক প্রকার জোর খাটিয়ে ক্ষমতায় ধরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা সরকার। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রা শুরু করে তারা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। শুধু তাই নই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কমিটিতেও রয়েছে তাদের মধ্যে দু’জন সমন্বয়ক।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির প্রায় সব নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করেই বেশ উজ্জীবিত দেখা যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীকে।

এসবের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন হবে কি না উঠছে সে প্রশ্নও। এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো হ্যা আছে কারন বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে৷ ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে৷ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু ৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তার সময় থেকেই শুরু হয়েছে ছাত্র রাজনীতির পচন ধরে৷ এরশাদের আমলে চারবার ডাকসু নির্বাচন হলেও, স্বৈরাচার পতনের পর ২৮ বছর আটকে ছিল ডাকসু নির্বাচন৷ অনেক আশা নিয়ে গত ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হলেও তা প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি৷ আর ডাকসু  নির্বাচন দিয়েই সরকার ধারনা পেয়ে যায় সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা কতনিচে নেমে গেছে। তাই ডাকসুর পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের যে আশা জেগেছিল; তা আর পূরণ হয়নি৷

২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের করুন মৃত্যু সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েট শিক্ষার্থীরা গর্জে উঠে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করে। সেইসঙ্গে বুয়েটে সব রকম ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তখন থেকেই ওই ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য তৎপরতা চালাতে পারেনি কোনো সংগঠন।

গত তিন দশকে কোনো ছাত্র সংগঠনই শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এ সময়ে আলোচিত আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে, ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসসুন্নাহার হলে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে দেশ কাঁপানো ছাত্র আন্দোলন, ২০০৪ সালে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন, ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সর্বশেষ কোটা সংস্কার ও স্বৈরাচার পতন আন্দোলন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেপথ্য ভূমিকা থাকলেও আন্দোলন হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। ১৫ বছর দাপটে সরকারকে উৎখাত করে তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাই নতুন রাষ্ট্র গঠনের বা রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সচেতনতা। ক্যাডারভিত্তিক বাহিনী বানানো, নির্যাতন-নিপীড়ন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই করেছি। ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকাতেই ফ্যাসিবাদী হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব হয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। পেশিশক্তির রাজনীতি, নির্যাতন-নিপীড়নের রাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি পতনের সময় এসেছে।’

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম লিখেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নয়। নিয়মিত ‘ছাত্র সংসদ’ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র প্রতিনিধি চাই।’

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হলেই শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব-মুক্ত হয়ে যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। কারণ গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতি দেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। এ জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর ভেতর স্বচ্ছ গণতন্ত্র চর্চা, সহনশীলতা, দলীয় লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করা, ছাত্রদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন, মেধাবীদের নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে।


Spread the love