ফায়ার সার্ভিসের এত কর্মীর মৃত্যুর কারণ কী


Md. Hasib Uddin প্রকাশের সময় : জুন ৬, ২০২২, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন / ৭৫
ফায়ার সার্ভিসের এত কর্মীর মৃত্যুর কারণ কী
Spread the love

ফায়ার সার্ভিস বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার খবর পায় শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে। আগুন নেভাতে নিকটস্থ কুমিরা ফায়ার স্টেশন ও সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই দুটি দলের ২৬ সদস্যের সবাই হতাহত হয়েছেন। তাঁদের ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের একটি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। ৩ জন নিখোঁজ। বাকি ১৪ জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, এর আগে কখনো একটি ঘটনায় এত অগ্নিনির্বাপণকর্মীর মৃত্যু হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ডিপো কর্তৃপক্ষ তাদের ফোন করেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টেলিফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে ছুটে যান। তাঁদের ধারণা ছিল, কনটেইনারের ভেতর পোশাকসহ অন্যান্য মালামাল রয়েছে। আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার পরও ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়নি যে কনটেইনারে রাসায়নিক (হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড) আছে। ফলে বিস্ফোরণের সময় ডিপোর ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা আর অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারেননি।

শনিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং শেডে আগুনের সূত্রপাত হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই শেডের কিছুটা দূরে থাকা রাসায়নিকভর্তি কনটেইনার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

আগুন নেভানোর জন্য শুরুতে কুমিরা ফায়ার স্টেশন থেকে ১৫ জনের যে দলটি ঘটনাস্থলে যায়, তাঁদের মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. রানা মিয়া (বাড়ি–মানিকগঞ্জ), মনিরুজ্জামান (কুমিল্লা), আলাউদ্দিন (নোয়াখালী) এবং মো. শাকিল তরফদার ও মিঠু দেওয়ান (রাঙামাটি)। মো. ইমরান হোসেন মজুমদার (চাঁদপুর) ও শফিউল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ) নামের দুই কর্মী নিখোঁজ। আটজন আহত হন।

সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন থেকে যাওয়া দলটিতে ছিলেন ১১ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নিপন চাকমা (বাড়ি-রাঙামাটি), রমজানুল ইসলাম (বাড়ি-শেরপুর) ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (বাড়ি-ফেনী)। মো. রবিউল ইসলাম (নওগাঁ) ও ফরিদুজ্জামান (রংপুর) নিখোঁজ। ছয়জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, নিখোঁজ চারজনের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেলেও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। বাকি তিনজনও মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আগুন নেভাতে যাওয়া ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ১০ সদস্য আহত হন। বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গতকাল রোববার ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কনটেইনার ডিপোটিতে কী কী ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, সে তথ্য কারখানা কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের দেয়নি।

জানা গেছে, প্রথম দলের সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণের পোশাক (ফায়ার স্যুট) পরে যান। রাসায়নিকের আগুন হলে বিশেষায়িত পোশাকে আসার কথা (কেমিক্যাল স্যুট)। এটি পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে রাসায়নিকের আগুন মোকাবিলা করা যায়। এমন পোশাক পরে গতকাল ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের আগুন নেভানোর কাজে দেখা যায়।

গতকাল ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কুমিল্লা জোনের উপপরিচালক আকতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে কুমিরা ও সীতাকুণ্ড স্টেশনের সদস্যরা ফায়ার স্যুট পরে আগুন নেভাতে বের হন। এ জন্য তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের চারটি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন সদস্য আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত।

সুত্র: প্রথম আলো


Spread the love