পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক শিশুর ৩টি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে। গত জুন মাসের ১০ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত শিশুটি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সঠিকভাবে ইনজেকশন পুশ না করায় এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির বাবা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তিনি। শিশুটি পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া মহল্লার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের এক বছর বয়সী ছেলে তাসিম মোল্লা। পাবনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান জাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, আমার ছেলে তাসিম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১০ জুন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১২ জুন সকালে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তব্যরত নার্স আমার বাচ্চাকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশনটি রগে প্রয়োগ না করে এক পুরুষ নার্স মাংস পেশিতে পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই বাচ্চার ডান হাত ফুলতে থাকে এবং বাচ্চা যন্ত্রণায় চিৎকার-আর্তনাদ করতে থাকেন।
বাচ্চার ব্যথা ও কান্নার কারণে ডিউটিরত নার্সদের বারবার দেখালে বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। ইনজেকশন পুশ করার স্থানে (ডান হাত) ক্রমান্বয়ে লালাভ-বেগুনি বর্ণ ধারণ করে এবং আমার বাচ্চা অনবরত ব্যথার যন্ত্রণায় কাঁদতে ও ছটফট করতে থাকে। আমার স্ত্রী বার বার নার্সদের ডেকে দেখালে তারা বলেন, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। তৎকালীন কর্তব্যরত ডাক্তারকে দেখালে তিনি ক্ষত স্থানে আইস (বরফ) দিতে এবং নাপা সিরাপ খাওয়াতে বলেন।
১৩ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি পেসক্রিপসনে একটি মলম লিখে দেন এবং লাগাতে বলেন। ১৪ জুন তারিখে কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি তার বাচ্চাকে শিশু ওয়ার্ডে রেফার্ড করে দেন। বাচ্চার অনবরত কান্নায় তারা বারবার কর্তব্যরত ডাক্তার-নার্সদের শরণাপন্ন হন। তারা সবাই ঠিক হয়ে যাবে বলে এড়িয়ে যান। ১৮ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে চিকিৎসক শিশুকে রক্ত দিতে বলেন। তারা শিশুকে ১ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওইদিন রাত ১২টার দিকে শিশুসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিশুর বাবা।
তিনি আরও জানান, ২১ জুন হাসপাতালে টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতিশকে দেখালে তিনি শিশুকে আবারও রক্ত দিতে বলেন। এ পর্যন্ত প্রতিটি ডাক্তারই বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কেউই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। ৪ জুলাই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরের কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে সে সময় তার কক্ষে থাকা কর্মকর্তারা পুলিশের ভয় দেখায় এবং হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত রোগী ভর্তির ফর্মের মূল কপি রেখে ফটোকপি দেয়। এ সময় আমার বাচ্চাকে ইউরো মেডিক্যাল কনসালটেশনে ডা. জাহেদী হাসান রুমীকে দেখাতে বলেন। আমি শিশুকে ডা. জাহেদী হাসান রুমীর চেম্বারে দেখালে তিনি ঢাকার শিশু হাসপাতাল (নিটর, ঢাকা) রেফার্ড করেন। এরপর ৬ জুলাই শিশুকে ঢাকার শেরেবাংলাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে দেখালে তারা হাতে সার্জারির মাধ্যমে ডান হাতের ৩টি আঙুল কেটে ফেলতে বলেন। পরে ২৯ জুলাই পাবনার শিমলা হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে ৩টি আঙুল কেটে ফেলা হয়।
শিশুটির বাবা আরো বলেন, শুধু আমার শিশু সন্তান নয়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ-চিকিৎসক-নার্সদের এরকম অবহেলায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী দুর্ভোগ ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন, দেখার কেউ নেই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :