টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে বাংলাদেশ। যেখানে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে টাইগারদের ম্যাচ জেতান তাসকিন আহমেদ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে ১৫ বছর পর বাংলাদেশের এটি প্রথম জয়। যদিও ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত খেলা টেনে নিয়ে রোমাঞ্চ ধরে রাখে ডাচরা।
আজ সোমবার হোবার্টে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে গ্রুপ টুতে মুখোমুখি হয় দুদল। বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় ম্যাচটি মাঠে গড়ায়। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ডাচ বোলারদের তোপে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান সংগ্রহ করতে পারে। জবাবে তাসকিন-মাহমুদদের দারুণ বোলিংয়ে ১৩৫ রানে থামে নেদারল্যান্ডস।
১৪৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে তাসকিনের প্রথম দুই বলেই উইকেট হারায় ডাচরা। ইনিংসের প্রথম বলে বিক্রম সিং খোঁচা দিলে স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যাচ নেন। পরের বলেই বাস ডি লিডকে উইকেটরক্ষক লিটন দাসে ক্যাচে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি করেন তাসকিন।
একটা সময় ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডস। দলীয় চতুর্থ ওভারে সাকিব আল হাসানের প্রথম ওভারে ২টি রান আউট হয়েছে। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্সকে নিয়ে ৪৪ রান তোলেন কলিন আকারম্যান। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। ব্যক্তিগত ১৬ রানে সাকিবের বলে হাসান মাহমুদকে ক্যাচ দেন এডওয়ার্স। এরপর মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে দ্রুতই ফিরে যান টিম প্রিঙ্গল।
মাঝে বৃষ্টির কারণে ফের কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। তবে দারুণ বল করা হাসান মাহমদু নিজের শেষ ওভারে ফের উইকেটের দেখা পান। এবার লোগান ফন বিককে ২ রানে তাসকিনের ক্যাচে ফেরান এই ডানহাতি।
দলীয় ১৭ ও নিজের শেষ ওভারে ফের ঝড় তোলেন তাসকিন। দ্বিতীয় বলে ফেরান শারিজ আহমেদকে। তার বল সজোড়ে আঘাত করলে থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচ লুফে নেন হাসান মাহমদু। এরপর পঞ্চম বলে তাসকিন বিদায় করেন ডাচদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। ফেরান ৬২ রান করা কলিন আকারম্যানকে। মোসাদ্দেকের ক্যাচে পরিণত হওয়া এই ব্যাটার ৪৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান।
নেদারল্যান্ডস শেষ উইকেটেও লড়াই চালিয়ে যায়। এ সময় পল ফন মেকেরেন ও ফ্রেড ক্লাসেন ১৯ বলে ৩৪ করে ডাচদের স্বপ্ন দেখান। তবে ১৪ বলে ২৪ রান ফন মেকেরেনকে ইনিংসের শেষ ফিরিয়ে অলআউট করেন সৌম্য সরকার।
বাংলাদেশ বোলার তাসকিন ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার সেরা ম্যাচ বোলিং। আগের সেরাটি ছিল পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ১২ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট। এছাড়া হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ১৫ রানে ২টি উইকেটের দেখা পান।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল বাংলাদেশ। দলীয় ৫ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৩ রান যোগ করেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ষষ্ঠ ওভারে পল ফন মেকেরেন প্রথম বলে শর্টে থাকা ফিল্ডার বাস ডি লিডের কাছে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। ১৪ রান করেন এই ব্যাটার। পরের ওভারেই বিদায় নেন শান্ত। এবার টিম প্রিঙ্গলের বলে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ২০ বলে ৪টি চারে ২৫ করা এই বাঁহাতি।
দলের সেরা দুই ব্যাটার লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান দ্রুত বিদায় নেন। নবম ওভারে লোগান ফন বিকের বলে ব্যক্তিগত ৯ রানে টম কুপারকে ক্যাচ দেন লিটন। আর ৭ রান করে শারিজ আহমাদের বলে আউট হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বৃষ্টির কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। তবে শুরু হওয়ার পর মাঠে ফিরেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফন মেকেরেনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ইয়াসির আলি। ৩ রান করে বোল্ড হন তিনি।
এরপর আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তারা ৩৭ বলে ৪৪ রান তোলেন। তবে দলীয় ১৮তম ওভারে বাস ডি লিডের শিকারে ফেরে দুজনই। নুরুল ১৩ রানে মাঠ ছাড়েন। আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৮ রান করে আউট হন আফিফ। এই ব্যাটার ২৭ বলে ২টি চার ও সমান ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান। শেষ দিকে ১২ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক হোসেন।
ডাচ বোলারদের মধ্যে পল ফন মেকেরেন ও বাস ডি লিড ২টি করে উইকেট পান।
দারুণ বোলিংয়ের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন তাসকিন আহমেদ।
আপনার মতামত লিখুন :