ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে আসেননি বুয়েট শিক্ষার্থীরা


Md. Hasib Uddin প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১, ২০২৪, ৩:১৪ পূর্বাহ্ন / ২৯
ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবি থেকে সরে আসেননি বুয়েট শিক্ষার্থীরা
Spread the love

সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রবেশকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধসহ জড়িতদের শাস্তির দাবিতে টানা দুদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই সমাবেশের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। সে অনুযায়ী আজ রোববার দুপুরে বিশাল সমাবেশের পর প্রকাশ্যে কয়েকশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ প্রেক্ষিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীরা কোনো সমাগম না করলেও তাদের দাবি থেকে সরে আসেননি। তবে তারা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে বলে জানা গেছে।

রোববার (৩১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে দৃশ্যমান কর্মসূচি না দেওয়ার কারণ ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থীরা আজ রোববার নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে সমাগম করেনি। ক্যাম্পাসের আশপাশের সব এলাকায় গত রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি-ধমকি প্রদান করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন সব অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এমতাবস্থায়, বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এসব কারণে শিক্ষার্থীদের আজ ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়ার মানে এই নয়, বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে, এ দাবি বুয়েটের সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর।

তারা জানান, আজ ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষায় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ অবস্থান আন্দোলন ছাড়াই, কোনো বাধা ছাড়াই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শুধু একজন বাদে সব শিক্ষার্থীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। ১২১৫ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২১৪ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত ৩০ মার্চ ২২তম ব্যাচের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেনি অর্থাৎ শতভাগ অনুপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত এই নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

এই শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্ররাজনীতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সব ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা, কমিটি দেওয়া, ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতি মুক্ত রাখার বিধি লঙ্ঘন। এ ছাড়া, রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ সেখানে রাত ৩টায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতারা দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা স্বাভাবিক ঘটনা না এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা। দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। আমরা শপথ করছি সব রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে উপাচার্যের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগকে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়।


Spread the love