কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যাচ্ছে নির্বাচনে


Md. Hasib Uddin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২২, ২০২৩, ৪:১৬ পূর্বাহ্ন / ৫০
কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যাচ্ছে নির্বাচনে
Spread the love

শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নিবন্ধিত দুটি দল ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন নির্বাচনী জোট গঠন করা হচ্ছে। যেখানে যুগপৎভুক্ত ১২ দলীয় জোটের শরিক নিবন্ধিত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সঙ্গে যুগপতের বাইরে থাকা নিবন্ধিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিও (মতিন) থাকছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া নতুন জোটে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আরও সাত-আটটি অনিবন্ধিত দলও যুক্ত হতে পারে। আজ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনী জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জোটের ব্যানারে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে দুঃসময়ে যুগপতের দুই নিবন্ধিত মিত্রকে হারাতে যাচ্ছে বিএনপি। তবে যুগপতের শরিকদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া নতুন এই জোট সম্পর্কে অবগত নয় প্রধান শরিক বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব বলেছেন, কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হবে। এ জোটের মাধ্যমে তিনটি নিবন্ধিত দলসহ বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনিবন্ধিত আরও কয়েকটি দলও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে। এর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি জানান, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ১২ দলীয় জোটের শরিক তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিও (জাগপা) এ জোটে থাকতে পারে।

এ প্রসঙ্গে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। সেখান থেকে আমরা আন্দোলনের নতুন রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করব।

নতুন জোটের বিষয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, বুধবার সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নতুন এই জোট গঠন হচ্ছে। নতুন জোট নির্বাচনে যাবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য জোট করছি, নির্বাচনের জন্য নয়।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদ ও জাগপা নতুন এ নির্বাচনী জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, হালুয়া-রুটির আসন ভাগাভাগিতে আমরা নেই। আমরা এই সরকারের অধীনে পাতানো নির্বাচনে যাব না। একই কথা বলেছেন জাগপার সভানেত্রী ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান।

জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক) ও আব্দুল আউয়াল মামুনের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টির প্রতীক হাতঘড়ি; অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রতীক হাত (পাঞ্জা) এবং অধ্যাপক ডা. এম এ মুকিত ও এএনএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘কাঁঠাল’।

গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে দলটি। ৪২টির মতো দল যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ আটটি নিবন্ধিত দল রয়েছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করেই ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে যুগপতের শরিকদের। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যুগপতের নিবন্ধিত একাধিক দল বিএনপিকে ছেড়ে নির্বাচনে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। এতে নিবন্ধিত দলগুলো নিয়ে যুগপৎ জোটে সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি চাপ ও এমপিত্বের প্রলোভনে পা না দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যুগপৎ শরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হলে ‘জাতীয় সরকার’-এ শরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়নেরও আশ্বাস দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি ভালো হয় না বলেও সতর্ক করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার গুঞ্জনই সত্যি হতে যাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে যুগপৎ জোটে ভাঙনও দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম দৈনিক কালবেলাকে বলেন, শুনলাম কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। নতুন জোটের ঘোষণা দেবেন। বর্তমান রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে তাকে তো আমরা ঠেকাতে পারব না।

নতুন নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কালবেলাকে বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে এবং নানা চাপ ও প্রলোভনে শরিকদের নির্বাচনে নিতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং যুগপতের শরিকরা নিজেরা স্বেচ্ছায় নতুন জোট করতেছে, না তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, সেটাও আলোচনার বিষয়। তবে দেশের মানুষ যারা রাজনীতি বোঝেন কিংবা বোঝেন না, তারা সবাই জানেন, নির্বাচন সামনে রেখে এখন কী ঘটনা ঘটছে, কেন ঘটছে। এটাতে আমাদের ভাবমূর্তি যদি দুই আনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকারের অবশিষ্ট ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া জেনারেল ইবরাহিম জোট ত্যাগ করে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জোট ছাড়বেন। কারণ, উনি তো নিজেই ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র। কাজেই এখানে কোনো যুক্তি নেই, অন্য কোনো বিষয় আছে, আর সেটা সবাই বোঝে।

তিনি আরও বলেন, যে নির্বাচনে যাওয়ার আলোচনা হচ্ছে, সে নির্বাচন যে হবে, বা হবে না, সেটার শতভাগ গ্যারান্টিইবা কে দিচ্ছে? আমাদের দেশে তপশিল ঘোষণা করে তা আবার স্থগিত করার দৃষ্টান্ত তো রয়েছে। তপশিল ঘোষণা করে সেটা পরিবর্তন করারও উদাহরণ আছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দুই দিন, এমনকি এক দিন আগেও জেনারেল ইবরাহিম যেটা বলেছেন, সেটা পরিবর্তন করতে হলে তো যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। কাজেই দেখেন না কী হয়। খেলা তো কত রকমের হচ্ছে। উনি এখন যা বলছেন, আমরা সেটাতে বিশ্বাস রাখতে চাই। সামনে কী বলবেন, সেটা তো অনুমানের বিষয়। উনি তো বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার ও নির্বাচনের বিরোধিতা করার জন্য এই জোট করছেন। সেটা উনি করতেই পারেন। প্রত্যাশা করি, তিনি যা বলেছেন কাজ দিয়ে সেটা প্রমাণ করবেন। তবে সেটা (নতুন জোট) নিয়েও আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। কারণ, উনি একটা জোটে আছেন, সেখানেই তো থাকার কথা।


Spread the love