আসামীর দায়ের কোপে পুলিশ সদস্যের হাতের কব্জি আলাদা অতপর…


Md. Hasib Uddin প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০২২, ৩:৫১ পূর্বাহ্ন / ১২৩
আসামীর দায়ের কোপে পুলিশ সদস্যের হাতের কব্জি আলাদা অতপর…
Spread the love

আসামী ধরতে গিয়ে আসামীর দায়ের কোপে পুলিশের এক সদস্যের হাতের কব্জি আলাদা হয়ে গেছে। অতপর কি হলো  তা জানতে পুলিশের একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার রুহুল আমি শিপার, ডিআইজি বাংলাদেশ পুলিশ  তার লেখা ঘটনাটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

১৫ মে। রোববার। বসুন্ধরা সিটি শপিং মল এর বাটা’র আউটলেট বেশ বড়। ছোট মেয়েকে নিয়ে এসেছি। ওর জন্যে জুতা কিনবো। জুতার মাপ ইউকে ৩ না ৪ হবে এটা নিয়ে বেশ পেরেশানিতে আছি। ওর মা সাথে থাকলে ৪ এর জায়গায় ৩ নম্বর নিলেও কসুর হতো না। কিন্তু আজ যে আমি একা। অতএব গভীর ভাবনার বিষয়। এমন মুসাবিদার মাঝে হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। দেখি এসপি চট্টগ্রাম।

–হ্যালো

–স্যার, রশিদুল বলছি। একটা সমস্যায় পড়ে আপনাকে ফোন করেছ

ওর কন্ঠে উদ্বেগ। বলেই চলেছে।

–আসামী ধরতে গিয়ে আসামীর দায়ের কোপে আমাদের এক সদস্যের হাতের কব্জি আলাদা হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা বলছেন দ্রুত ঢাকায় নিয়ে গেলে জোড়া লাগানো সম্ভব। আমাদের জরুরি মেডিকেল ইভাকুয়েশন দরকার। RAB এর (হেলিকপ্টার) পাইলট এর সাথে কথা হয়েছে। শুধু ওদের অপারেশন্স কে একটু বলতে হবে, স্যার।

বললাম, আমি দেখছি।

RAB এর ADG (Operations) কে ফোন দিলাম। পাওয়া গেলো না। দ্বিতীয়বার করতেই ধরলেন। আস্তে আস্তে বললেন,

–আমি একটা মিটিং এ।

বললাম,

–We need a medevac.

–এখনি ব্যবস্থা করছি। আপনাকে ডিরেক্টর (অপস) ফোন দিবে।

একটু পরেই লে. কর্ণেল ইফতেখারের ফোন।

–স্যার, আমাদের হেলিকপ্টার রেডি আছে। আর চট্টগ্রামে কোথায় নামাবো? আমার একজন কন্টাক্ট পারসন দরকার।

বললাম,

–চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামবে। আর এসপিকে যোগাযোগ করতে বলে দিচ্ছি।

এবার ফোনে রশিদুলকে আর পাচ্ছি না। ভাবলাম, এমন পরিস্থিতিতে ও নিশ্চয়ই ব্যস্ত। এর মাঝে ডিরেক্টর (অপস্) আবার ফোন করলেন। ল্যান্ডিং ঠিক না করে হেলিকপ্টার ওড়ানো যায় না। সে মূহুর্তে  প্রতিটা সেকেন্ড আমি গুণতে পারছিলাম। সে এক অন্য রকম অপেক্ষা। এমন অবস্থায় এসপি চট্টগ্রামকে এসএমএস করলাম। শেষ পর্যন্ত অবশ্য যোগাযোগ হয়ে গেল।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (হেলথ) মোস্তাফিজের  সাথে কথা বললাম। দেখলাম, ও সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালের একটা টিম অ্যাম্বুলেন্সসহ রেডি করে ফেলেছে। ওকে ধন্যবাদ দিলাম।

বাসায় এসে মেয়ের মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী জুতা ‘ছোট হয়ে’ গেলো। ভাবলাম, বসুন্ধরায় আরেকবার যেতে হবে। এর মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ এ রশীদুলের মেসেজ এসেছে। বেশ বড় মেসেজ। জবাবে আমি লিখলাম, It’s a routine.

সে সাথে সাথে ফোন করলো। বললো,

–স্যার, এইমাত্র ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাই করেছে। আর এটা মোটেও রুটিন কাজ নয়। এত অল্প সময়ে সব ব্যবস্থা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ, স্যার।

এত অল্প সময়ে চট্টগ্রাম থেকে উড়িয়ে আনার জন্য ধন্যবাদ পাবে মূলতঃ RAB। আর এটাই RAB এর প্রথম Medevac নয়; এভাবে বহুবার আকাশে উড়াল দিয়েছে তাঁরা।

ধন্যবাদ পাবেন সার্জন ডা. সাজেদ ফারুকী যিনি এমন একটা দীর্ঘ, স্নায়ুক্ষয়ী সার্জারি করার মতো বিদ্যার্জন করেছেন। মানব সেবায় এমন মানুষের খুব বেশি প্রয়োজন আজ।

সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, জনি সুস্থ হয়ে উঠুক। ওর জোড়া লাগানো হাত আরও শক্তিশালী হোক। সেই হাতে আবার তুলে নিক হাতকড়া।

এটা শুধুমাত্র একটা জোড়া লাগানোর গল্প নয়, তার থেকেও বড় কিছু। আমরা যে আসলেই পারি।

[পুনশ্চঃ আমাদের এয়ার উইং এর সক্ষমতা আরও বাড়ছে। বাংলাদেশ পুলিশের জন্য দু’টি  অত্যাধুনিক Mi-171A2 সিরিজের (প্রতিটির আসন সংখ্যা ২৪) হেলিকপ্টার ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে যা অচিরেই বহরে যোগ দিবে]


Spread the love